ঢাকা,শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ : হাতি চলাচলের ব্যয় ৫ হাজার কোটি টাকা

150812072552_bangla_elephant_640x360_bbc_nocreditডেস্ক রিপোর্ট  ::

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের সীমান্ত গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে রেলওয়ে। তবে এটি হাতি চলাচলের অন্যতম রুট হওয়ায় কিছু স্থানে রেলপথের উচ্চতা বাড়াতে হবে। হাতির সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষ এড়াতে রেলপথের কিছু অংশে বসাতে হবে সেন্সর। এজন্য প্রকল্পটিতে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ৫ হাজার কোটি টাকা।

রেলওয়ের তথ্যমতে, ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে নতুন প্রস্তাবটি গত মঙ্গলবার পুনরায় পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এতে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। গত ডিসেম্বরে প্রকল্পটির ব্যয় চূড়ান্ত করা হয় ১৩ হাজার ২৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আর ২০১০ সালের জুলাইয়ে প্রথম দফা অনুমোদনের সময় রেলপথটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

প্রস্তাবে তিনটি বিষয় নতুন যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রকল্পের রামু ও আশপাশ এলাকা হাতির অভয়ারণ্য। ওই এলাকায় বুনো হাতি প্রায়ই দল বেঁধে চলাচল করে। অনেক সময় হাতি শুঁড় তুলেও পথ চলে। এক্ষেত্রে রেলপথ যাতে হাতির চলাচলে কোনো সমস্যা সৃষ্টি না করে, সেজন্য এমব্যাঙ্কমেন্টের উচ্চতা কিছু স্থানে বাড়াতে হবে। পাশাপাশি এমব্যাঙ্কমেন্টের নিচে হাতি চলাচলের জন্য রাখতে হবে পর্যাপ্ত খালি জায়গা। এজন্য এমব্যাঙ্কমেন্টের নিচে দুই পিলারের মাঝে পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গার প্রয়োজন হবে। এছাড়া ভূমির সমতলে রেলপথে কখনো হাতি এলে ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য রেলপথে বিশেষ ধরনের সেন্সর বসানোর কথা বলা হয়েছে, যাতে কখনো হাতি রেলপথে থাকলে ট্রেনচালক ওই এলাকা অতিক্রমের আগেই তা বুঝতে পারেন। পাশাপাশি হাতির বিষয়টি মাথায় রেখে জমির প্রয়োজন কিছুটা বাড়বে। এতে জমি অধিগ্রহণের ব্যয়ও কিছুটা বেশি হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, প্রকল্প এলাকাটি বুনো হাতির জন্য বিশেষ স্পর্শকাতর। হঠাত্ হাতি লাইনে চলে এলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আবার যেসব এলাকায় রেলপথ উঁচু, তার নিচ দিয়ে হাতির চলাচল যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেটাও লক্ষ রাখা হচ্ছে। এজন্য রেলপথে সেন্সর বসানো ও এমব্যাঙ্কমেন্ট উঁচু করা হবে। সব মিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের আওতাধীন চট্টগ্রামের দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন আছে। তবে উদ্যোগ সত্ত্বেও কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ আর হয়নি। এছাড়া ট্রান্স-এশিয়ান রেলপথে যুক্ত হতে মিয়ানমারের সীমান্ত গুনদুম পর্যন্ত ট্রেন সংযোগ দরকার। তাই ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মধ্যে দোহাজারী থেকে রামু ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার ও রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্পটির ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছর ডিসেম্বরে প্রকল্পটির জন্য জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৭০৬ একর। এতে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৪৩২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। নতুন প্রস্তাবে জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ আরো কিছুটা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৭৪১ একর। আর ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৩৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

যদিও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন খাতে ব্যয় কমানো হয়েছে। গত বছর এ খাতে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ১৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। নতুন প্রস্তাবে এ ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৮২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। তবে বেড়েছে পরামর্শক ব্যয়। গত ডিসেম্বরে এ খাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয় ৩২৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। নতুন প্রস্তাবে তা বাড়িয়ে ৮১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা করা হয়েছে।

মো. আমজাদ হোসেন বলেন, জমি অধিগ্রহণ ব্যয় ২০১৪ সালের মূল্য ধরে হিসাব করা হয়েছিল। এখন জমির দাম আরো বেড়েছে। জমি অধিগ্রহণের পরিমাণও বাড়বে। এছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে আলোচনা করেই হাতি-সংশ্লিষ্ট নতুন বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনে পুনরায় পিইসি বৈঠক করা হবে। তবে ব্যয়ের নতুন হিসাবই চূড়ান্ত নয়। দরপত্র আহ্বানের পর চূড়ান্ত ব্যয় নির্ধারণ করা যাবে। এতে ঠিকাদারের প্রস্তাব অনুযায়ী রেলপথটির নির্মাণ ব্যয় কমতেও পারে আবার বাড়তেও পারে।

প্রকল্পটির নির্মাণ খাতে ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ৭৬৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। গত ডিসেম্বরে এ খাতে ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৪৭৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। নতুন প্রস্তাবে তা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। আর মূল্য আকস্মিকতা (কনটিনজেন্সি) খাতে ১২০ কোটি ৩৯ লাখ ও ভৌত আকস্মিকতা খাতে ৪৭৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি শুল্ক ও ভ্যাট খাতে ৫৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া নতুন প্রস্তাবে বেশকিছু ব্যয় যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এনজিও খাতে ৪১ কোটি, নির্মাণকালীন সুদ পরিশোধে ৪১৯ কোটি ৫৮ লাখ ও কমিটমেন্ট চার্জ ৩১ কোটি টাকা।

নতুন প্রস্তাবে প্রকল্প-সহায়তা বাবদ এডিবির কাছে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। বাকি অর্থ সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহের প্রস্তাব করা হয়েছে।

 

পাঠকের মতামত: